এনজিওপ্লাস্টিঃ বড় ধরনের অস্ত্রোপচার না করে হৃৎপিন্ডের সংকীর্ণ ল্যুমেন (গহ্বর)-যুক্ত বা রুদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনি পুনরায় প্রশস্ত লুমেনযুক্ত বা উন্মুক্ত করার পদ্ধতিকে এনজিওপ্লাস্টি (angio = রক্তবাহিকা + plasty পুনর্নির্মাণ) বলে = এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে সরু বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ল্যুমেনের ভেতর দিয়ে হৃৎপিন্ডে পর্যাপ্ত O2-সরবরাহ নিশ্চিত করে হৃৎপিন্ড ও দেহকে সচল রাখা। বুকে ব্যথা (অ্যানজাইনা), হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায় এনজিওপ্লাস্টি। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের ডাঃ অ্যানড্রেস প্রয়েন জিগ সর্বপ্রথম এ পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন ।
এনজিওপ্লাস্টির প্রকারভেদঃ
এনজিওপ্লাস্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে প্লাক জমা বা রক্ত জমাটের কারণে সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া বা রূদ্ধ হয়ে যাওয়া করোনারি ধমনির ল্যুমেন চওড়া করে O2-সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখা । প্লাকের ধরন ও অবস্থান অনুযায়ী এনজিওপ্লাস্টির ধরনও বিভিন্ন হয়ে থাকে।
এনজিওপ্লাস্টি ৪ ধরনেরঃ
• বেলুন এনজিওপ্লাস্টি (Ballon angioplasty),
• লেজার এনজিওপ্লাস্টি angioplasty),
• অ্যাথরেকটমি (Athrectomy) ও
• করোনারি স্টেনটিং (Coronary stenting)। উল্লিখিত ধরনগুলোর মধ্যে করোনারি স্টেনটিং এনজিওপ্লাস্টি বর্তমানে বেশি প্রচলিত।
এনজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়াঃ এনজিওগ্রাম (angiogram) করে নিশ্চিত হওয়ার পর এধরনের সার্জারি করা হয়। এ ধরনের কার্যক্রমে ঊর্ধ্ব ব বা পা-এর একটি অংশ কেটে ধমনির ভিতর দিয়ে পাতলা নল বা ক্যাথেটার (catheter) প্রবেশ করিয়ে কৌশলে রূদ্ধ আংশিক বুজে যাওয়া ধমনিতে পৌঁছানো হয় । ক্যাথেটারটিতে একটি সরু তার, তারটির অগ্রভাগে একটি চুপসানো বেলুন ও বেলুনটির চারদিকে একটি তারের জালের চৌঙ বসানো থাকে । জালিকাটিকে স্টেন্ট (stent) বলে। স্টেন্টটি সাধারণ স্টিলের (বিশেষ প্রক্রিয়ায় নির্মিত) তৈরি । তবে এখন অন্যান্য ধাতুর বা বিশেষ ধরনের সুতার তৈরি স্টেন্টও ব্যবহার কর হয়। বেলুনটি বাইরে থেকে ফোলানো হয় এবং বেলুনটির সাথে সাথে স্টেনটিও ফুলতে থাকে। ফুলানো বেলুনের চাপে স্টেন্টটি প্রতিবন্ধক স্থানটির উপর চাপ দিতে থাকে। এর ফলে ধমনির গহ্বরটি ধীরে ধীরে বড় হতে হতে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থাতেই পৌঁছতে পারে। সেন্টটি ধমনির সাথে সেটে যায় এবং চর্বি যুক্ত কণা নিষ্কাশিত হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
এনজিওপ্লাস্টির উপকারিতাঃ করোনারি হৃদরোগের অন্যতম প্রধান রোগ সৃষ্টি হয় করোনারি ধমনিতে। ধমনির ভিতর ব্লক সৃষ্টি হলে পর্যাপ্ত 02- সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপেশিতে সংবহিত হতে পারে না। ফলে হার্ট ফেইলিউর ও হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমন মারাত্মক অবস্থা মোকাবিলায় এনজিওপ্লাস্টি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
এনজিওপ্লাস্টি ধমনির লুমেন থেকে ব্লক অপসারণ বা হ্রাস করতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা উপশম হয়। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে জীবন রক্ষায় অবদান রাখে। যেহেতু বুক উন্মুক্ত করতে হয় না সেহেতু কষ্ট, সংক্রমণ ও দীর্ঘকালীন সতর্কতার প্রয়োজন পড়ে না। মাত্র এক থেকে কয়েক ঘন্টায় জীবন রক্ষাকারী এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে এবং কয়েক দিন পর থেকেই হালকা কাজকর্ম করা সম্ভব। সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহের বেশি লাগে না। যাঁরা বৃক্কের অসুখে ভুগছেন, কিংবা এনজিওগ্রামের সময় রঞ্জকের প্রতি অ্যালার্জি দেখা দেয় এবং যাঁদের বয়স ৭৫ বছরের বেশি তাঁদের ক্ষেত্রে এনজিওপ্লাস্টি কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে ।
Read more